কর্মস্থলে অনুপস্থিত সুনামগঞ্জে ৫ কর্মকর্তা-বহাল তবীয়তে চাকরি

- আপডেট সময় : ১২:২৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২ ১২১ বার পড়া হয়েছে
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ সুনামগঞ্জের ভাটির জনপদ প্রত্যন্ত উপজেলা শাল্লায় ২০১৮ সালের পর থেকে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
অথচ বেতন ভাতাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন বাড়ি বসে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। তিনি ২০১৮ সালে শাল্লায় যোগদানের পর থেকেই নিরুদ্দেশ।
বহুবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( সদ্য বিদায়ী) আল মুক্তাদির হোসেন যোগাযোগ করে ও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাঁর না কি উপরে বড় মাপের লোক আছে। তাই কেউ কিছু করতে পারবেনা বলে জানা যায়। তেমনি উপজেলা রিসোর্চ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে শাল্লায় যোগদান করার পর থেকেই কর্মস্থলে অনিয়মিত। মাঝে মধ্যে এসে বেতন নিয়ে চলে যান। অন্যদিকে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পেয়ার আহমেদ।
তিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে শাল্লায় যোগদান করেন। কিন্তু এখন আর উনাকে আর দেখা যায় না। শুনা যাচ্ছে তিনি ও বাড়ি বসে বেতন নেন।
শুধু তারা নয় অতি গুরুত্বপুর্ন দপ্তর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা তপন কান্তি পাল। তিনি ২০১৯ সালের অক্টোবরে যোগদান করার পর থেকেই অনুপস্থিত রয়েছেন। হঠাৎ করে আসে এবং বেতন নিয়ে চলে যান। উনার বিষয়ে প্রাণি সম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ রয়েছেন বলে জানা যায়।
হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাজী আনোয়ার উল্লার যোগদানের পর থেকে শাল্লা থাকে আর দেখা যায় না। এবিষয়ে ফোনে কাজী আনোয়ার উল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাসায় বসেই সকল কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কোনো কাজ আটকে থাকেনি।’
গুরুত্বপূর্ণ ৫ জন কর্মকর্তার অনুপস্থিত থাকার ফলে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেমন ব্যহত হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত হচ্ছে স্ব স্ব দপ্তরের উপকারভোগীরা। অথচ এসব বিষয় নিয়ে কেউ কোন পদক্ষেপ কিংবা আলোচনা করেছেন না। শুধু কি তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এখনো প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা ও নেয়া হয়নি এই সব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সরকারি নিয়োগ অনুযায়ী তাদের কর্মস্থল শাল্লা উপজেলা দেখানো হলেও বাস্তবে তাঁরা রয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সোমবার বেলা ১১ টায় সরেজমিনে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অফিসে গেলে ওই কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।
অফিসের কর্মচারীরা বলেন, ‘স্যার বাহিরে আছেন।’ মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তা পেয়ার আহমদ বলেন, ‘মাঝে মধ্যে আমি কর্মস্থলে থাকি। শাল্লা আসলে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’ এই কথা বলে ফোন কেটে দেন। এরপর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা তপন কান্তি দাসের সঙ্গে।
একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি বলে কথা বলা যায়নি । বাসায় বসে অফিস করার নিয়ম আছে কী না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ চললে তো কোনো সমস্যা নাই। আর মাঝে মধ্যে তো যাওয়া হয়।’ উপজেলা রিসোর্চ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, ‘কর্মস্থলে থাকা হয়।
তবে কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় এবং জাতীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য কর্মস্থলে থাকতে পারছি না।’ এ ব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।’
প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘শাল্লার ইউআরসিকে মাসে ১০টি উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি কর্মস্থলে যদি না থাকেন তাহলে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি এলাকার উন্নয়ন কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। তাই দ্রুত এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি প্রত্যশা করছেন শাল্লাবাসী।