করোনা টিকা নিতে আগ্রহ নেই সুনামগঞ্জের মানুষের

- আপডেট সময় : ১০:০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৬৪ বার পড়া হয়েছে
ষ্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জঃ হাওরের বাওরের জেলা সুনামগঞ্জে করোনা টিকা গ্রহণকারীর হার দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে কম। সিলেট বিভাগের অন্য চার জেলার চেয়েও এই জেলা করোনা টিকা কম গ্রহণ করেছেন মানুষ।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় করোনা টিকা গ্রহণকারীর হার ৫১.১৬ শতাংশ। অথচ জাতীয়ভাবে এই হার ৬৫.৪৪ শতাংশ। সিলেট বিভাগের অন্য তিন জেলার চেয়েও এই জেলায় টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম।
স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, সিলেট বিভাগের চার জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকা গ্রহণকারীর হার মৌলভীবাজারে ৬৩.২২ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৫৬.৮১ শতাংশ, সিলেট জেলায় ৫৭.৯১ শতাংশ।
সুনামগঞ্জে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫১.১৬ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে সোমবার পর্যন্ত জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরে ৫৮.১৯, শান্তিগঞ্জে ৪৯.৮১, ছাতকে ৪৯.০৯, দোয়ারাবাজারে ৫২.৩৯, বিশ^ম্ভরপুরে ৫৩.৪৪. তাহিরপুরে ৪৭.৯৪, জামালগঞ্জে ৪৮.২৪, ধর্মপাশায় ৪৫.৪৪, দিরাইয়ে ৪৮.০৪, শাল্লায় ৫১.৮৯ এবং জগন্নাথপুরে ৪৮.৭৬ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন।
দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন, সুনামগঞ্জ সদরে ৪৭.১৭, শান্তিগঞ্জে ৩৮.৬৬, ছাতকে ৩৬, দোয়ারাবাজারে ২৮.৮৮, বিশ^ম্ভরপুরে ৪৩, তাহিরপুরে ৩৬.১৭, জামালগঞ্জে ৩৬.০২, ধর্মপাশায় ৩১.৪৭, দিরাইয়ে ৩৪.৬০, শাল্লায় ৩৫.০৮ এবং জগন্নাথপুরে ৪০.২৯ শতাংশ মানুষ। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. এমরান হোসেন বললেন, ধর্মপাশার কিছু কিছু ইউনিয়নের দূরত্ব উপজেলা সদর থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো নয়। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বংশিকুণ্ডার বাসিন্দাগণ নেত্রকোণার কলমাকান্দা—বারহাট্টা উপজেলা সদরে ধর্মপাশার আগে যেতে পারেন। এজন্য ওখানেই অনেকে টিকা নিয়েছেন।
আমাদের কর্মীরা দরজায় দরজায় জরিপ করে টিকা নেয় নি এমন মানুষের সংখ্যা কম পান। এরপরও আমরা আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করছি টিকা দেবার জন্য। উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নে একটি এয়ারকন্ডিশনড কক্ষ করা হয়েছে। ওখানে শনিবার থেকে টিকা দেওয়া হবে।
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রাজিব চক্রবর্তী বললেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার উপজেলা ছাতক। ইপিআই অনুযায়ী এই উপজেলায় জনসংখ্যা চার লাখ ৫৭ হাজার। আবার ডব্লিউএইচও’এর তথ্য অনুযায়ী লোকসংখ্যা চার লাখ ৬৯ হাজার।
এই জনসংখ্যার অনেকেই প্রবাসে আছেন। কেউ কেউ ছাতকের বাইরেও রয়েছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ইন্টারপার্সন কাউন্সিলিং (আইপিসি) করে মানুষকে টিকা দেবার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। টিকা না দিলে তারা যে সরকারি কোন সেবা পাবেন না সেটিও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার থেকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ, জাউয়াবাজার, ছাতক শহরের শহিদ মিনার এলাকা ও নোয়ারাই বাজারে টিকা মেলা হচ্ছে। যাদের ভোটার আইডি কার্ড নেই, তাদেরকেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর শনাক্ত করে দিলে, মোবাইল নম্বর রেখে মেলাতেই টিকা দেওয়া হবে। শুক্রবার পর্যন্ত, অর্থাৎ তিনদিন চলবে এই করোনা টিকা মেলা।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন বললেন, সিলেট বিভাগ কেবল নয়, দেশের অনেক জেলা থেকেই সুনামগঞ্জে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা কম। এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সকলের সহায়তা চেয়েছি আমরা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশে এক কোটি মানুষকে টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
ওইদিনের সুনামগঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা আমরা জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতায় পূরণ করতে চাই। একইভাবে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা আমরা বাড়িয়ে দেবার জন্য সকলকে আরো বেশি সক্রিয় হবারও নির্দেশ দিয়েছি।