ঢাকা ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ ::
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা’র আদর্শ বাস্তবায়ন তরুনদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে নড়াইল-১আসনে আবারো আ’লীগের মনোনয়ন পেলেন বিএম কবিরুল হক মুক্তি খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা ছিলেন বহুমাত্রিকগুনের অধিকারী : অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী ফের নৌকার টিকিট পেলেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল পি‌রোজপু‌রে ফেজবু‌কে স্টাটার্স দি‌য়ে অনার্স পড়ুয়া ছা‌ত্রের আত্মহত্যা যেভাবে জানা যাবে এইচএসসির ফল > How to know HSC result নেত্রকোণা -২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ওমর ফারুক জনপ্রিয়তার শীর্ষে চাটখিলে যুবলীগের ৫১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত দিনব্যাপী গণসংযোগ করলেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহ্ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েল দেশে সকল ধর্মের নাগরিকদের সমান অধিকার রয়েছে –স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

রানি বিরহিণীর দিঘি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ৩১৪ বার পড়া হয়েছে
দেশের সময়২৪ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুতানালি দিঘির এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের মানুষ চেনা যায় না। কথিত আছে, খননের পর দিঘিতে জল ওঠেনি। জল না ওঠায় নিচের দিকে যতটুকু খনন করা সম্ভব, তা–ও করা হয়। তবু জল না ওঠায় রাজা–প্রজা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। অবশেষে কমলা রানি নাকি স্বপ্নাদেশ পান, ‘গঙ্গাপূজা কর, নর বলি দিয়া, তবেই উঠিবে দিঘি জলেতে ভরিয়া।’ স্বপ্ন দেখে রানি চিন্তিত হয়ে পড়েন। নরবলি দিতে তিনি নারাজ।

নরবলি না দিয়ে রানি গঙ্গামাকে প্রণতি জানান। মহাধুমধামে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে দিঘির মধ্যে গঙ্গাপূজার বিরাট আয়োজন করা হয়। কমলা রানি গঙ্গা মায়ের পায়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, ‘কোন মায়ের বুক করিয়া খালি/ তোমারে দিব মাতা নরবলি? আমি যে সন্তানের মা, আশায় করিয়া ক্ষমা কোলে তুলিয়া নাও। মা পূর্ণ করো তোমার পূজা।’ হঠাৎ বজ্রপাতে দিঘির তলায় ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর দ্রুত পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায় দিঘি। কিন্তু লোকজন হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে পাড়ে উঠতে পারলেও রানি তলিয়ে যান। সেই থেকে কমলা রানি বা সুতানালি নামেই এ দিঘি পরিচিতি পায়।

সাবেক এমপি ও মন্ত্রী অধ্যাপক আবদুস সালাম রচিত নালিতাবাড়ী মাটি মানুষ এবং আমি বই থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শালমারা গ্রামে সশাল নামের এক গারো রাজা রাজত্ব করতেন। শালমারা গ্রামের উত্তরে গারো পাহাড় পর্যন্ত তাঁর অধীনে ছিল। সামস-ইলিয়াস শাহ তখন বাংলার শাসনকর্তা। ১৩৫১ সালে তিনি সশাল রাজার বিরুদ্ধে সেনা পাঠান। সশাল রাজার রাজধানী ছিল শালমারা গ্রামে। রাজা পলায়ন করে আশ্রয় নেন জঙ্গলে। পরবর্তী সময়ে গারো রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর রাজা সশাল শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দিঘির মাঝখানে ছোট একটি ঘর তৈরি করে চারদিকে পরিখার মতো খনন করেন। রাজা যখন সেখানে অবস্থান করতেন, তখন তাঁর বাহিনী বড় বড় ডিঙিনৌকায় করে চারদিকে পাহারা দিত।

কালক্রমে ওই ভূখণ্ড ধসে দিঘিতে রূপ নিয়েছে। রাজার শেষ বংশধর ছিলেন রানি বিরহিণী। দিঘিটি রানি বিরহিণী নামে পরিচিতি পায়। ১৯৪০ সালে সরকারি ভূমি জরিপে দিঘিটিকে রানি বিরহিণী নামেই রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে দিঘিটি খননের সত্যিকার দিন, ক্ষণ, ইতিহাস জানা না গেলেও এটা যে একটা ঐতিহাসিক নিদর্শন, এ বিষয়ে এলাকার কারও সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন দিঘিটি পরিত্যক্ত থাকায় জলের ওপর শৈবাল জমে ওঠে। শৈবালগুলো এত ভারী হয়ে ওঠে যে এর ওপর গজিয়ে ওঠে ঘাস। যার ওপর গরু অবাধে ঘাস খেতে পারত। ১৯৭২ সালে প্রথম দিঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এই দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সুতানালি দিঘিপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি। ১৯৮৪ সালে সমিতি নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে সমিতির সদস্যসংখ্যা ১১৮। সব সদস্যই দিঘির পাড়ে ঘরবাড়ি করে বসবাস করেন। দিঘিটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এখানে শৌখিন মৎস্যশিকারিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সারা দেশ থেকে মৎস্যশিকারিরা সমিতির দেওয়া টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। এ দিঘির মাছ খুব সুস্বাদু বলে প্রশংসা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

রানি বিরহিণীর দিঘি

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

সুতানালি দিঘির এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের মানুষ চেনা যায় না। কথিত আছে, খননের পর দিঘিতে জল ওঠেনি। জল না ওঠায় নিচের দিকে যতটুকু খনন করা সম্ভব, তা–ও করা হয়। তবু জল না ওঠায় রাজা–প্রজা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। অবশেষে কমলা রানি নাকি স্বপ্নাদেশ পান, ‘গঙ্গাপূজা কর, নর বলি দিয়া, তবেই উঠিবে দিঘি জলেতে ভরিয়া।’ স্বপ্ন দেখে রানি চিন্তিত হয়ে পড়েন। নরবলি দিতে তিনি নারাজ।

নরবলি না দিয়ে রানি গঙ্গামাকে প্রণতি জানান। মহাধুমধামে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে দিঘির মধ্যে গঙ্গাপূজার বিরাট আয়োজন করা হয়। কমলা রানি গঙ্গা মায়ের পায়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, ‘কোন মায়ের বুক করিয়া খালি/ তোমারে দিব মাতা নরবলি? আমি যে সন্তানের মা, আশায় করিয়া ক্ষমা কোলে তুলিয়া নাও। মা পূর্ণ করো তোমার পূজা।’ হঠাৎ বজ্রপাতে দিঘির তলায় ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর দ্রুত পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায় দিঘি। কিন্তু লোকজন হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে পাড়ে উঠতে পারলেও রানি তলিয়ে যান। সেই থেকে কমলা রানি বা সুতানালি নামেই এ দিঘি পরিচিতি পায়।

সাবেক এমপি ও মন্ত্রী অধ্যাপক আবদুস সালাম রচিত নালিতাবাড়ী মাটি মানুষ এবং আমি বই থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শালমারা গ্রামে সশাল নামের এক গারো রাজা রাজত্ব করতেন। শালমারা গ্রামের উত্তরে গারো পাহাড় পর্যন্ত তাঁর অধীনে ছিল। সামস-ইলিয়াস শাহ তখন বাংলার শাসনকর্তা। ১৩৫১ সালে তিনি সশাল রাজার বিরুদ্ধে সেনা পাঠান। সশাল রাজার রাজধানী ছিল শালমারা গ্রামে। রাজা পলায়ন করে আশ্রয় নেন জঙ্গলে। পরবর্তী সময়ে গারো রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর রাজা সশাল শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দিঘির মাঝখানে ছোট একটি ঘর তৈরি করে চারদিকে পরিখার মতো খনন করেন। রাজা যখন সেখানে অবস্থান করতেন, তখন তাঁর বাহিনী বড় বড় ডিঙিনৌকায় করে চারদিকে পাহারা দিত।

কালক্রমে ওই ভূখণ্ড ধসে দিঘিতে রূপ নিয়েছে। রাজার শেষ বংশধর ছিলেন রানি বিরহিণী। দিঘিটি রানি বিরহিণী নামে পরিচিতি পায়। ১৯৪০ সালে সরকারি ভূমি জরিপে দিঘিটিকে রানি বিরহিণী নামেই রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে দিঘিটি খননের সত্যিকার দিন, ক্ষণ, ইতিহাস জানা না গেলেও এটা যে একটা ঐতিহাসিক নিদর্শন, এ বিষয়ে এলাকার কারও সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন দিঘিটি পরিত্যক্ত থাকায় জলের ওপর শৈবাল জমে ওঠে। শৈবালগুলো এত ভারী হয়ে ওঠে যে এর ওপর গজিয়ে ওঠে ঘাস। যার ওপর গরু অবাধে ঘাস খেতে পারত। ১৯৭২ সালে প্রথম দিঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে এই দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সুতানালি দিঘিপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি। ১৯৮৪ সালে সমিতি নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে সমিতির সদস্যসংখ্যা ১১৮। সব সদস্যই দিঘির পাড়ে ঘরবাড়ি করে বসবাস করেন। দিঘিটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এখানে শৌখিন মৎস্যশিকারিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সারা দেশ থেকে মৎস্যশিকারিরা সমিতির দেওয়া টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। এ দিঘির মাছ খুব সুস্বাদু বলে প্রশংসা রয়েছে।