‘হেড স্যার আমারে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দিলো না’

- আপডেট সময় : ১২:৫১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
মো. শামীম মিয়া। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ফরম ফিলাপের সময় টাকা বকেয়া থাকায় প্রবেশপত্র দেয়নি প্রধান শিক্ষক। তাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি সে।
শামীম শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার জুলগাঁও গ্রামের কৃষক মৃত আব্বাস আলীর ছেলে। উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শামীম মিয়া বলেন, আমার বাবা নাই, খুব কষ্ট করে টাকাপয়সা যোগাড় করে পড়ালেখা চালিয়ে আসছি। অনটনের কারণে ১ হাজার টাকা ফরম ফিলাপের সময় কম দিছিলাম। কিন্তু স্যার কম নিতে রাজি হয়নি। স্যারকে বারবার অনুরোধ করেছি, বাকি টাকা পরে দিয়ে দেবো। এরপর সময়মত অ্যাডমিট কার্ড নিতে গেছি। স্যার ওই দিন বলছে, টাকা আনছস? আমি স্যারকে বলেছি, স্যার টাকা যোগাড় করতে পারিনি। তবে আমি স্যার, টাকাটা পরে দিয়ে দেবো। তখন স্যার বলল, তুই পরীক্ষা দিবার যাইস তখন এডমিট দিমুনি। কিন্তু পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি স্যার আসেনি। এমনকি আমাদের স্কুলের কোনো স্যারকেই খুঁজে পায়নি। আর এডমিট না পাওয়ায় আমার পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন পুড়ে গেল। হেড স্যার আমারে এসএসসি পরীক্ষা দিতে দিলো না।
শামীমের মামা আযাদ মিয়া জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের জন্য ৩ হাজার টাকা করে নেন প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। তখন শামীম দিয়েছিল ২ হাজার টাকা। সে পরে আরও ১ হাজার টাকা দিতেও চেয়েছিল। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়ে দিলেও মাত্র ১ হাজার টাকার জন্য শামীমের প্রবেশপত্র দেননি প্রধান শিক্ষক। এতে শামীমের ১০ বছরের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেল। এমন শিক্ষকদের জন্য একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ খুয়ে যাবে, এর বিচার চাই।
মা শিরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পোলাডারে পড়াইতাছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছে। আমি ওই শিক্ষকের বিচার চাই।
অভিযোগ পাওয়ার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ।
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, শামীম নামের ছেলেটার ফরম ফিলাপ বা প্রবেশপত্র পাওয়ার বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টা জানলে পরিষদ বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম। এ ঘটনাটি যদি প্রধান শিক্ষক করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া বলেন, শামীমের বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। কেবল টাকার জন্য যদি পরীক্ষার হলে বসতে না পারে, তাহলে প্রধান শিক্ষকের এমন কাণ্ডে সচেতন সবাই বিব্রত। এমন দরিদ্র ও এতিম শিক্ষার্থীর শিক্ষাব্যয়ভার প্রতিষ্ঠান থেকেই চালিয়ে নিতে পারে। ওই শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার চাই। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, আমাকে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানোর পরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে উপজেলায় এসে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার রেজুয়ান আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি জেনে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ নিতে বলেছি।