নদী ভাঙনে বিলীনের পথে নলছিটির সরই গ্রাম

- আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর ২০২১ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে
ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ নদী পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম ভাঙন। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামটির বিস্তীর্ণ এলাকা সাড়া বছরই নদীভাঙনের শিকার হয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার।বিত্তবানরা অন্যত্র জমি কিনে নিজ ভিটা ত্যাগ করছে আর নিম্মবিত্তরা সব হারিয়ে হচ্ছে নিঃস্ব।
রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সরই গ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় নদীভাঙন অব্যাহত থাকলেও শীতকালেও ভাঙছে নলছিটির সরই গ্রামের একটি অংশ।এ বছর তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। মানচিত্র থেকে প্রতিদিনই কমছে সরই গ্রামের সীমানা।
এ বছর জুন মাস থেকেই ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা বিষখালী এবং হলতা নদীর ভাঙন বিগত বছরের তুলনায় অনেকটা বেশি। সুগন্ধা নদীর প্রবেশমুখ বিষখালীর তীরে থাকা একটি সাইক্লোন শেল্টার চলতি বছরের ২৬ আগষ্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ জেলার নদীর পাড়ের বাসিন্দারাও দিন দিন নদীভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, বরিশাল-খুলনা নৌ রুটের ঝালকাঠি অংশে এলপি গ্যাস বহনকারী জাহাজের ঢেউয়ের চাপে শাখা নদীগুলোও ভেঙে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন বা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং দ্রুতগতির নৌযানের ঢেউয়ের কারণে ক্ষতির শিকার হয় নদীর তীর। কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আব্দুল জব্বার তালুকদার বলেন, প্রতিবছর সুগন্ধা নদীর দক্ষিন পাড় ভাঙতেছে। সরই এলাকার নদীর পাড় থেকে গত কয়েক বছরে প্রায় ৬০টি পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে।
একই এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, সরই গ্রামের ভাঙ্গনকূলের অনেকে নিজেদের সবটুকু ভিটে মাটি হরিয়ে রাস্তার পাশে সরকারী জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতেছে। আমার নিজের যতটুকু জমি আছে তা আগামী ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে নদীগর্ভে চলে যাবে। অবসরপ্রাপ্ত তফসীলদার হাজী আব্দুল হক তালুকদার বলেন, যে জায়গাটায় আমি অনেক বসতঘর দেখেছি সেখান থেকে এখন লঞ্চ চলচল করে। নদী এখন আমার বাড়ির নিকটে চলে আসছে।
আমি হয়তো ভবিষ্যতে নিজ ভিটায় থাকতে পারবো না। ভুক্তভোগী গৃহিনী মোসাম্মৎ নিপা বলেন, নদী এখন আমার ঘরের পাশে, নদীর পাড় ভাঙতেতো আছেই, সেই সাথে এলপি গ্যাস কোম্পানীর জাহাজ এতো দ্রুত গতিতে চালায়, ওদের তুফানে আমাদের ঘর কেঁপে ওঠে। তাতে ভাঙনের তীব্রতাও দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। নদীপাড়ের বাসিন্দা সুখী বেগম বলেন, যাদের জমি ভেঙে যাচ্ছে তারা ঐ জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। তাতে ভাঙন আরও বেড়েছে, এ ছাড়া গ্যাস কোম্পানীর জাহাজের তুফানে বাড়ির উঠানে পানি চলে আসে।
ছোট বাচ্চা দড়ি দিয়ে বেধে রাখি। যাতে নদীতে পরে না যায়।রাতেও ঘুম আসেনা কখন যেনো নদীতে ভেসে যাই। মোজাম্মেল মোল্লা বলেন, সরকার থেকে নদী ভাঙন বন্ধ না করা হলে ২ / ১ মাসের মধ্যে আমরা আর নিজ ভিটায় থাকতে পারবো না। কোথাও গিয়ে ঘর তোলার টাকাও আমার নেই। কুলকাঠি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার বেল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ভাঙনকূলে থাকা আমার অনেক স্বজনরা তাদের বাপ-দাদার বাড়ির চিহ্নটুকু রাখতে পারেনি।
আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এবং আমাদের সংসদ সদস্যকে অবগত করেছি। কিন্তু হচ্ছে/হবে বলে আজ পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো সুরাহা পাইনি। নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, স্কুল মাদ্রাসা, বাজার এবং অনেক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে গ্যাস বহনকারী জাহাজ গুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাঙনের তিব্রতা বেড়েছে।
তবে সুগন্ধা নদীর সরই অঞ্চলটি ভাঙন রোধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের ভাঙন কবলীত সরই নামক স্থানটি আমরা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছি।
এবং পরিদর্শন পূর্বক ওখানে আমাদের প্রাথমিক জরিপ সম্পাদনা করা হয়েছে। সম্পাদনা শেষে একটি ডিজাইন ডাটা প্রেরণ করবো। ডিজাইন ডাটা পেলে ওখানে ডিপিপি কার্যক্রম শুরু করা হবে। ডিপিপি কার্যক্রম অনুমোদন পেলে আমরা ওখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।