বঙ্গবন্ধ সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে যমুনার দুই প্রান্তে দুটি ভাগে দেশি, বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এ সেতুর নির্মাণ কাজ। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধ সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় সময় অপচয়ের পাশাপাশি শিডিউল বিপর্যয়ে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এ সমস্যার সমাধানে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে রেল সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে দেশের মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০টি পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আরো কয়েকটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ সমাপ্তের পথে।
রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধ সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। রেল সেতুটি নির্মিত হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচ যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ ও উন্নত করবে। এছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে বলে রেল বিভাগ কর্তৃপক্ষ মনে করছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তর জনপদের ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যে এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহনও সহজ হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল। এতে এই জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবু ইউসুফ সূর্য জানান, দীর্ঘ দিনের আকাঙ্খার রেল সেতু নির্মান হতে চলেছে। এই সেতু নির্মান হলে সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এ সেতুর মাধ্যমে যাত্রী সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেরও দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ডা.জহুরুল হক রাজা জানান, সিরাজগঞ্জ বাসির প্রতিক্ষার ফল বঙ্গবন্ধু রেল সেতু। দীর্ঘ অন্দোলন সংগ্রাম করে আমাদের সোনার বাংলায় পেয়েছি দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু। সেতুটি নির্মান শেষ হলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় আর হবেনা।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সিরাজগঞ্জ বাসির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনর্ফারেন্সের মাধ্যমে এই রেল সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ইতিমধ্যে এ রেল সেতুর ৩৪ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।